হত্যাচেষ্টা সালমান রুশদির হামলাকারী দোষী সাব্যস্ত

খ্যাতিমান ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাতে হত্যাচেষ্টা ও হামলার ঘটনায় নিউ জার্সির এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

২৭ বছর বয়সী হাদি মাতারের ৩০ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। আগামী ২৩ এপ্রিল তার সাজা ঘোষণার দিন ঠিক করা হয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, ২০২২ সালের অগাস্টের ওই হামলায় সালমান গুরুতর আহত হন। তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। আর একটি হাতের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়।

 

আড়াই বছর আগে যেখানে ওই হামলার ঘটনা ঘটে, তার কাছের পশ্চিম নিউ ইয়র্ক রাজ্যের শাটাকোয়া কাউন্টি আদালতে দুই সপ্তাহের শুনানি শেষে শুক্রবার মাতারকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারকরা।

ঘটনার দিন লেখকের সঙ্গে মঞ্চে থাকা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসকে আহত করার জন্যও মাতারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। হামলার সময় রিসের মাথায় সামান্য আঘাত লাগে।

বিবিসি লিখেছে, ৭৭ বছর বয়সী স্যার সালমান সাক্ষ্যে বলেছেন, তিনি ঐতিহাসিক শাটাকোয়া ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখেন।

ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, হামলাকারীর চোখ দেখে তিনি মুষড়ে পড়েন। ওই চোখ গাঢ় কালো ছিল জানিয়ে লেখক বলেন, তা খুব হিংস্রও ঠেকছিল।

প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, তাকে ঘুষি মারা হয়েছে, পরে তিনি বুঝতে পারেন যে- তাকে মোট ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে- তার চোখ, গাল, ঘাড়, বুক, ধড় ও উরুতে ক্ষত রয়েছে।

স্যার সালমানের উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রথম প্রকাশের ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ওই হামলা ঘটে।

মুসলিম নবী মুহাম্মদের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত উপন্যাসটি মুসলমানদের অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল, যাদের কাছে উপন্যাসটির বিষয়বস্তু সৃষ্টিকর্তার নিন্দাকীর্তন ঠেকছিল। ১৯৮৮ সালে বইটি প্রকাশের পর কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ করা হয়। বুকারজয়ী এই লেখক অসংখ্য মৃত্যু হুমকি পেতে থাকেন।

ওই বইয়ের জন্য ইরানের তখনকার শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি তাকে হত্যার ফতোয়াও জারি করেছিলেন। তখনকার বাস্তবতায় সালমান নয় বছর আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার বিরুদ্ধে হুমকি কমেছে বলে তিনি মনে করেন।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শুনানির সমাপনী যুক্তিতর্ক চলাকালে কৌঁসুলি জেসন স্মিড হামলার একটি ভিডিও স্লো-মোশনে দেখান।

আদালতে স্মিড বলেন, আমি চাই, আপনারা হামলার নিশানার ধরন খতিয়ে দেখুন।

সেদিন আশেপাশে অনেক লোক ছিল, কিন্তু সেখানে কেবল একজনকেই নিশানা করা হয়েছিল।

দুই সপ্তাহের শুনানি চলাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যান্ড্রু ব্রুটিগান যুক্তি দেন যে, মাতার স্যার সালমানকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন-এমনটা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন কৌঁসুলিরা।

তার আইনজীবীরা নিজেদের কোনো সাক্ষীকে ডাকতে চাননি এবং মাতার আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি।

মাতার ২০২২ সালে কারাগার থেকে নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্যার সালমানের হত্যার ফতোয়ার জন্য ইরানের তখনকার শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির তারিফ করেন।

লেখক সম্পর্কে মাতার বলেন, আমি মনে করি না তিনি খুব ভালো মানুষ। তিনি এমন এক ব্যক্তি- যিনি ইসলামকে আক্রমণ করেছে।

তিনি বলেন যে, তিনি ‘স্যাটানিক ভার্সেসে’র কয়েক পৃষ্ঠা পড়েছেন।

লেবানন থেকে আসা বাবা-মায়ের নিউ জার্সির ফেয়ারভিউয়ের ঘরে জন্ম নেওয়া মাতারকে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে বস্তুগত সহায়তার আরেক মামলাতেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

Exit mobile version