লক্ষ্মীপুরে ইটভাটায় দৈনিক পুড়ছে ২০০ মণ কাঠ, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, উজাড় হচ্ছে বাগান ।।
মোঃ কামাল উদ্দিন লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদাতা ঃ
লক্ষ্মীপুরে ১৩৮টি ইটভাটার মধ্যে অনুমোদন নেই ৮৪টিরই। এসব ইটভাটায় প্রতিদিন ১৫০-২০০ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইট তৈরির উপকরণ হিসেবে ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হলেও তা মানছেন না মালিকরা। ইট পোড়ানোর জন্য কয়লা ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। সেটাও মানছেন না তারা। এতে একদিকে যেমন জমি উর্বরতা হারাচ্ছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে প্রতি বছরই জেলায় ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলা, রামগতি ও কমলনগরে নতুন করে ১৭টি ইটভাটা চালু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় চারটি, কমলনগরে তিনটি ও রামগতিতে ১০টি ইটভাটা চালু করা হয়েছে। যার কোনোটিরই অনুমোদন নেই। গত মৌসুমে জেলায় ইটভাটা ছিল ১২১টি। এর মধ্যে অনুমোদনহীন ইটভাটা ছিল ৬৭টি। চলতি মৌসুমে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৮টিতে। এর মধ্যে ৮৪টিই অনুমোদনহীন। এসব ইটভাটার মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ৪৪টি। যার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ বৈধতা রয়েছে মাত্র ২২টির। কমলনগর উপজেলায় রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে বৈধতা রয়েছে মাত্র নয়টির। রামগতি উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ৪৫টি। এর মধ্যে মাত্র দুটি ইটভাটার বৈধতা থাকলেও বাকি ৪৩টি চলছে অবৈধভাবে। রামগঞ্জ উপজেলায় ২৫টি ইটভাটার মধ্যে ১৭টির বৈধতা রয়েছে। তবে রায়পুরে চারটি ইটভাটারই বৈধতা রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনে বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু কর্ণপাত করছে না প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের প্রয়োজন হয়। জেলা প্রশাসন সে সহযোগিতা করছে না। ফলে ইচ্ছা থাকলেও অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর একক ক্ষমতাবলে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। কিন্তু তাতে তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না। গত দুই বছরে জেলার ১২টি ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। মামলার পর মালিকরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে আবারো ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান, এরই মধ্যে কয়েকটি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এসব ইটভাটার অধিকাংশই স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে। পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ, রাবার ও গাড়ির টায়ার। বৈধ বা অবৈধ সব ইটভাটায় ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জমিগুলো গর্ত হয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।
কমলনগর উপজেলার চর সামছুদ্দিন গ্রামের শামীম ব্রিক ফিল্ডসহ কয়েকটি ইটভাটায় বসানো হয়েছে করাতকল। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কমলনগর উপজেলার নেতা তারেক সোলাইমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে অবৈধ ইটভাটা পরিবেশ ধ্বংস করছে। আমার এলাকায় শামীম ব্রিক ফিল্ডের অনুমোদন নেই। ইটভাটার কারণে আমার ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শামীম ব্রিক ফিল্ডের মালিক সোহাগ বলেন, ‘আমি ব্রিক ফিল্ড দিয়ে ২০০ পরিবারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। আমি সরকারকে ট্যাক্স দেব। এতে দেশের উপকার হচ্ছে। উপকার করতে গেলে সামান্য ক্ষতি তো মেনে নিতে হবেই।’
সদর উপজেলার আন্ধারমানিকের ইটভাটা মালিক মাকছুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সাল থেকে ভাটা চালিয়ে যাচ্ছি। বারবার লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করেও পাইনি। ইটভাটার পাশে স্কুল থাকায় আমাদের লাইসেন্স দেয়া হয় না। আমরা তো সরকারকে রাজস্বসহ সব ধরনের ট্যাক্স দিচ্ছি।’
মোঃ কামাল উদ্দিন লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদাতা