বাবা নিজের কেবিন থেকে আসলেন মেয়ের কেবিনে। রাত ফুরালেই দুজনকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হবে। বাবা এসে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো?
মেয়ে বলল, ভাল আছিতো।
তারপরে দুজনেই চুপ। কেউ কারো চোখের দিকে তাকাচ্ছেই না।
মেয়ের মনে হচ্ছে তাকালেই বুঝি বাবার চোখ দিয়ে পানি পরা শুরু করবে। বাবার মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার বড়ই জেদী, এখনো সময় আছে সিদ্ধান্ত বদলাবার।
মেয়েটা ভাবছে, এই সামান্য কিডনী দিয়ে যদি বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি, তাহলে পারলে দুইটা কিডনীই দিয়ে দিব। মেয়েটার সেঝ বোন পাশে বসে থেকে কান্না করছে আর মেয়েটার চুল বেণী করে দিচ্ছে। খুব বিরক্ত হলো মেয়েটা। কান্নাকাটি দেখে আব্বাতো আরো দুর্বল হয়ে পরবে। অপারেশনের আগে এটা মোটেও উচিত না।
যাইহোক, মেয়েটি বাবা কে বলল তুমি ঘুমাতে যাও, ভোরে উঠতে হবে, আমিও ঘুমাই। বাবা মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বললেন, তুমি অনেক বড় হও মা।
সেই সারা রাত মেয়েটির স্বামী, সব ভাই বোন মা আর কাজিনরা কেউ ঘুমায়নি। সবাই ভোরের অপেক্ষায়
মেয়েটি যখন অপারেশন থিয়েটারে চোখ বন্ধ করছে , তখন শেষবারের মতো দেয়াল ঘড়ি দেখলো। ঠিক সকাল ৮টা বাজে। তারপর আর কিছুই খেয়াল নেই। তারপর যখন জ্ঞান ফিরে আসলো, তীব্র ব্যথা আর পানির পিপাসা বোধ করছিলো। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলো ” how r u feeling now “, মেয়েটি প্রথমে বললো, ” too much pain…and please give me some water” তারপর জানতে চাইলো, ” doctor how is my father”. ডাক্তার বললেন, “he is absolutely fine, let me take u to ur room. u please sleep”. তারপর সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
তারপর যখন আবার ঘুম ভাঙলো, সেই ব্যথা আর পিপাসা। তখন রোজার মাস চলছিল।তার পিছনে এটেন্ডেন্ট বেডে ফ্যামিলির সবাই মিলে জম্পেশ ইফতারের আয়োজন করছিলো। ইফতারের খাবারের গন্ধে মেয়েটার ক্ষুধা চনমনিয়ে উঠলো। কেন উঠবে না, কাল রাত থেকে না খাইয়ে রেখেছে। মেয়েটির পিছনে সবাই কিন্তু সে তো সামনে রাখা আয়না দিয়ে সবই দেখছে আর বলছে আমাকে রেখে তোমরা এসব মজার খাবার খাচ্ছ, সবার পেট খারাপ হবে….কিন্তু কথা এতো আস্তে আস্তে বের হচ্ছিলো যে কেউ শুনছিলোই না। ডাক্তার আসলো, উনাকে মেয়েটা বললো, ” please give me some food and pain killer”, ডাক্তার বললো, ” u can’t take any food now, u have to wait. but i will give u pain killer in every 6 hrs. and give u very little water”.
বেচারির তখন মনে পড়লো, ওর কাজিন ওকে বলে দিয়েছিলো, ” তোকে কিন্তু প্রথম দিকে পানি ও খেতে দিবে না. শুধু কটন দিয়ে ঠোঁট টা একটু ভিজিয়ে দিবে, তুই তখন খপ করে বেশি পানি তা মুখে নিয়ে নিস ” . অবস্থা দেখে বুঝলাম এটাই একমাত্র উপায়। ডাক্তার কে বললো যা বলবেন তাই করবো, আগে লিটল ওয়াটার আর পেইন কিলার ই দেন। আর বললো বাবার সাথে দেখা করতে যেতে চায়। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হলে রোগী কে সম্পূর্ণ আলাদা রুমে রাখা হয়, নবজাতক শিশুর মতো take care করতে হয়। কেউ সামনে গেলে মাস্ক পরে যেতে হয়, রোগী কে ও মাস্ক পরে থাকতে হয়…আরো কত কি….ডাক্তার বললো বাবা ও নাকি সেন্স আসার পরে প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছে,” মেরে বেটি ক্যাইসে হে , মে উসসে মিলনা চাহিতি হু “. ডাক্তার আব্বা কে বুঝিয়েছে যে এখন তোমার মেয়ে কে তোমার কাছে আনলে ও ব্যথা পাবে। ওর বেথা তা কমুক, ২ দিন পর দেখা করাবো। মা ও যেয়ে বাবা কে বলে এসেছে আপনার মেয়ে ঠিক আছে, চিন্তা করবেন না। কিন্তু বাবা মেয়ের ২ জনের এই অস্থিরতা সহ্য করতে না পেয়ে pain killer injection দিয়ে হুইল চেয়ার এ করে মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হলো বাবার কাছে। যেয়ে কিন্তু দুজনেই নরমাল। কথা, যেন অফিসের ডিসকাশন চলছে।…..
বাবা : কেমন আছো মা ?
মেয়েঃ আমার একটু ব্যথা আছে শুধু, এছাড়া ভালো আছি. তোমার কি ব্যথা আছে?
বাবাঃ নাহ। মনে হয় আমাকে বেশি বেথার ওষুধ দিচ্ছে।ব্যথা যেন ফীল না করি এই জন্য।
মেয়েঃ ও তাই হবে। আমাকে তো পানি ও খেতে দেয়না।
বাবাঃ দিবে।এখন দিলে বমি হবে তাই দেয়না। আচ্ছা তুমি রুমে চলে যাও এখানে বেশিক্ষন থাকা লাগবে না.
মেয়েঃ আচ্ছা .
আর আসে পাশে মেয়ের ভাই বোন আবারো গঙ্গা যমুনা ভাসিয়ে দিচ্ছে।
মেয়েটার হাসব্যান্ড আর মেয়েটার স্কুল ফ্রেন্ড মিলে এই সময়টা মেয়েটার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় উপহার দিয়েছে।
তবে ইফতারের খাবার কথা টা ভাবলেই এখনো খুব হাসি পায়…
কিন্তু এতো কিছু করে ও বাবাকে বাঁচানো গেলোনা
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস সগিরা
Post Views: 298
Like this:
Like Loading...
Related