বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
২০২৪ সালের হজ্জ ব্যবস্থাপনার সকল প্রতিবন্ধকতা দ্রুত নিরসনে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনায়
অপারেটিং হজ্জ এজেন্সীর মালিকদের পক্ষ হতে
সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্য
তারিখ : ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, স্থান : জাতীয় প্রেস ক্লাব, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল
আলহামদুল্লিাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।
দেশপ্রেমিক ও জাতির বিবেক সম্মানিত সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে আমরা স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ হতে সম্পূর্ণ বৈরি পরিবেশে এক অভাবনীয় বিচক্ষণতার মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে ধর্মপ্রাণ স্বামর্থবান মুসলমানদের পবিত্র হজ্জে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। শুধু তাই নয়- স্বাধীন এই বাংলাদেশে ইসলামের ব্যাপক খেদমত করে ইসলামের ব্যাপক ও প্রচারের ব্যবস্থা করে গেছেন।শ্রদ্ধার সাথে আরো স্মরণ করছি ১৫ আগষ্টের কালো রাতে বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের যারা নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেছেন। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি- আল্লাহ তাআলা যেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন। আমরা আরো গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যে সমস্ত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাগণ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন।
সুপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ! আপনারা সকলে অবগত আছেন পবিত্র হজ্জ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সামর্থবান মুসলমানের উপর জীবনে একবার পবিত্র হজ্জ পালন করা ফরজ। কাজ যত পবিত্র, ফজিলতপূর্ণ হয় সেখানে শয়তানের চক্রান্তও প্রবল থাকে। শয়তানের সকল চক্রান্তকে ধুলিস্যাৎ করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা-বান্দীগণ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ পবিত্র হজ্জ পালন করে থাকেন। সচেতন সাংবাদিক হিসেবে আপনারা সকলেই অবগত আছেন- এই হজ্জ ব্যবস্থপনা নিয়ে এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ কত চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছে, কত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এখনো দুর্ভোগ নির্মূল হয়নি, তবে আলহামদুলিল্লাহ অনেক লাগব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ম আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং দিক নির্দেশনায় ধীরে ধীরে হজ্জ ব্যবস্থপনা অনেক উন্নত হয়েছে, ডিজিটাল হয়েছে, দুর্ভোগ কমেছে। এখন আর কাফনের কাপড় পরে কারো মিছিল করতে হয় না, মানবন্ধন করতে হয় না, কোন আন্দোলন করতে হয় না। ইতোমধ্যে মহান আল্লাহর অপার রহমতে কয়েকবার দক্ষিণ এশিয়ায় হজ্জ কার্যক্রমের জন্য আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এসবই সম্ভব হয়েছে মহান আল্লাহর রহমত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা, দিক নির্দেশনা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিশেষ করে মরহুম শেখ আব্দুল্লাহ সাহেব, যিনি হজ্জ ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন, এ ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকতা, হাব এবং অপারেটিং হজ্জ এজেন্সীগুলোর সম্মিলিত প্রয়াসে। এতে একদিকে যেমন বাংলাদেশের ভাব মর্যাদা বিশে^র দরবারে সমুন্নত হয়েছে; ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণও স্বাচ্ছন্দে আল্লাহর ঘর ও প্রিয় নবীজির রওযা যিয়ারত করে ধন্য হয়েছেন।
জাতির বিবেক সাংবাদিক বন্ধুগণ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ সাধনার ফসল সুষ্ঠু হজ্জ ব্যবস্থাপনায় এবার অভাবনীয় কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে- ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ্জ মিশনের কিছু কর্মকর্তাগণের অবহেলা বা দায়ীত্বহীনতার ফলে এসব জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করছে। এগুলোর দ্রুত সমাধান না হলে এবারের হজ্জ ব্যবস্থাপনায় বিশৃংখলার আশংকা প্রবল হচ্ছে বলে আমাদের কাছে প্রতিয়মান হয়। যার জন্য বাধ্য হয়ে আমরা আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি।
আপনারা জানেন, গত ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ্জ ১ শাখা হতে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং তারিখে হজ্জযাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে। চিঠিতে আরো জানানো হয় ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজ্জযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজ্জযাত্রীদের হজ্জে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ্জ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এর আগে ১০ ফ্রেব্রুয়ারী ২০২৪ ইং সনে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের এক পত্রে জানানো হয়, রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ্জ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ইং তারিখের মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানী, পরিবহান, আবাসন, ক্যাটারিং ইত্যাদি) সম্পাদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সকল চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুগণ,
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, সচিব মহোদয়, কাউন্সিলর হজ্জসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং হজ্জ সংশ্লিষ্ট সকলেরই জানা আছে যে, হজ্জযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার আগে নিম্নোক্ত কাজগুলো আগে সম্পন্ন করে ভিসা সাবমিট করতে হয়। যেমন-
১। তাওয়াফা কোম্পানী নির্ধারণ ও সেবার মূল্য পরিশোধ।
২। মিনার জোন নির্ধারণ ও জোনের মূল্য পরিশোধ।
৩। ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা ও হজ্জযাত্রীদের এয়ার টিকেট নিশ্চিত করা।
৪। মক্কা-মদিনার বাড়ী ভাড়া ও বিভিন্ন চুক্তি করার জন্য এজেন্সী মালিকদের মুনাজ্জিম ভিসা। অন্য কোন ভিসায় লক্ষ লক্ষ রিয়াল নিয়ে সৌদি আরবে যাতায়াত, চলাচল করা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ এবং সৌদি আইন বিরুদ্ধ।
৫। মক্কা-মদিনার বাড়ী ভাড়া।
৬। হজ্জযাত্রীদের বায়োমেটিক।
৭। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেনেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়িঞ্জা টীকা গ্রহন।
৮। পরিবহণ চুক্তি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজ।
৯। এসকল কাজ করার জন্য এজেন্সীর সৌদি একাউন্টে হজ্জযাত্রী অনুপাতে রিয়াল থাকতে হবে।
১০। সংশ্লিষ্ট সকল কাজ শেষ হওয়ার পর সৌদি ই হজ্জ সিস্টেমে ভিসার অপশন ওপেন হয় এবং তখন ভিসা সাবমিট করা যায়।
এসব কাজের অনেকগুলোই অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থায় ২৯ এপ্রিলের মধ্যে ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পত্রটি এক দিকে আমাদেরকে যেমন মহা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে; অপরদিকে হজ্জযাত্রীগণও চরম অস্থিরতা নিয়ে দিনাতিপাত করছে। এমন আরো অনেক বাস্তবায়ণ অযোগ্য সার্কুলার ধর্ম মন্ত্রণালয় হতে জারি করা হয়েছে। এতে ধর্মমন্ত্রণালয়ের সার্কুলারের প্রতি মানুষের আস্থা ইদানিং অনেক হ্রাস পেয়েছে। আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে হজ্জযাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত আমাদেরও প্রতিকুল পরিবেশে পড়তে হচ্ছে এবং সরকারের ভাবমুর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে।
আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানাতে চাই-
১। এখনো বাংলাদেশের সকল হজ্জযাত্রীর মিনার জোন চূড়ান্ত হয়নি।
২। পূর্ণাঙ্গ ও ফাইনাল ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা করা হয়নি। টিকেট নিশ্চিত না করে কিভাবে এজেন্সী মক্কা-মদিনার বাড়ী ভাড়া করবে?
৩। ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ইং তারিখে হজ্জ অফিস হতে মুনাজ্জিম ভিসা দেয়ার কথা বলে সকল কাগজপত্র জমা নিয়ে এখনো মুনাজ্জিম ভিসা দেয়া হয়নি। কিছুদিন আগে আবার জানালেন আমরা যেন বিজনেস ভিসায় মক্কায় যাই। বিজনেস ভিসার জন্য টাকা জমা দিয়ে বিধি মোতাবেক সবকিছু করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছি। ধর্মমন্ত্রণালয় বলেছিল- বিজনেস ভিসা নিতে কোন অসুবিধা হলে তাদেরকে জানাতে। জানিয়েও কোন প্রতিকার হয়নি। বর্তমানে উমরা ভিসাও বন্ধ আছে। বিনা নোটিশে উমরা ভিসা বন্ধ রাখা হলেও মন্ত্রণালয় বা হজ্জ মিশন এ বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। ২২ এপ্রিল এক সার্কুলারে মোনাজ্জেমদের জন্য ‘হজ্জ মিশন ভিসা’ দেয়ার কথা জানানো হলো। দীর্ঘদিন যাবত আমরা হজ্জের কাজের সাথে জড়িত আছি। এমন ভিসার নাম আমরা এই প্রথমবার শুনলাম। ভিসার প্রকৃতিতে বলা হয়েছে-এই ভিসা নিয়ে এখন এজেন্সীর সুবিধামত যেতে পারবে এবং হজ্জযাত্রীদের দায়িত্বপালন শেষে প্রত্যাবর্তন করবে। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক হজ্জ মিশন ভিসায় গমন করে হজ্জের নিশ্চয়তা প্রদান করে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। চিঠির এই ভাষায় আমাদের কাছে সুষ্পস্ট ভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, অন্যান্য বছরের ন্যায় অপারেটিং হজ্জ এজেন্সীকে মোনাজ্জেম ভিসা দিবে না, এই মিশন ভিসা দিয়েই আমাদের বাড়ী ভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক কাজ করে হজ্জযাত্রীদের সার্ভিস দিয়ে হজ্জ শেষে বাড়ী ফিরতে হবে। এই ভিসায় মোনাজ্জেমগণ এহরামের কাপড় পরতে পারবেন না, হজ্জ করতে পারবেন না, মোনাজ্জিম যদি এহরামের কাপড় পরতে না পারেন তবে হজ্জযাত্রীদের পরিচালনা, তাদের নিয়ে দোয়া করা, তাদের সালাতে ইমামতি করা এগুলো কিভাবে সম্ভব হবে? কারণ মিনা আরাফাতে যিনি হাজী নন তার ইমামতি, দোয়া ইত্যাদি কি হজ্জযাত্রীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? হজ্জযাত্রীদের আবেগ অনুভূতিকে কি আরাফাতের ময়দানে পাগড়ী, টুপি পরে জাগ্রত করা যাবে? এ ছাড়াও এখনই যদি আমাদের বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়- হজ্জযাত্রীদের ভিসা করা, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া, তাদেরকে সাথে নিয়ে যাওয়া, বকেয়া টাকা কালেকশন করা সহ বাংলাদেশ পর্বের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ কে করবে?এতে হজ্জ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। যদি একান্ত মিশন ভিসায় আমাদের বাড়ী ভাড়া করার কাজে যেতেই হয় তবে মোনাজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। এখনো অনেক এজেন্সীর সৌদি একাউন্টে টাকা জমা করা হয়নি। কিভাবে তারা বাড়ী ভাড়া করবে?
৫। ২০ এপ্রিল হজ্জযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে টীকা দেয়ার নোটিশ দেয়া হয়েছে। এখনো সরকার নির্ধারিত কোন হাসপাতালে টীকা পৌছায়নি এবং টীকা দেয়া শুরু হয়নি।
৬। আগামী ০৯ মে হজ্জ ফ্লাইট শুরু হবে। এতোগুলো জরুরী, গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। সৌদি ই হজ্জ সিস্টেমে ভিসার অপশন এখনো ওপেন হয়নি।
এতো কিছু বাকী থাকার পর সার্কুলার দেয়া হলো- ২৯ এপ্রিল ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে। যা সম্পূর্ণ অসম্ভব।
আমরা ষ্পটতঃ লক্ষ্য করছি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও মক্কার হজ্জ মিশনের কতিপয় কর্মকর্তার অবহেলা এবং সময়মত কাজগুলো না করা, একেক সময় একেক ধরণের সার্কুলার ইস্যু করা, বাস্তব পরিস্থিতি সৌদি সরকারের সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপন না করার ফলে সুষ্ঠু হজ্জ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃংখলার আমরা প্রবল আশংকা করছি। মক্কা হজ্জ মিশন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গুরুত্বপুর্ণ দপ্তর। দেশের বাস্তব পরিস্থিতি ও স্বার্থের বিষয় সৌদি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সামনে তুলে ধরে দেশের জন্য কল্যাণকর বিষয়গুলো নিশ্চিত করাই এর কাজ। এসব কাজ নিজেরা করতে না পারলে দেশের স্বার্থে লবিস্ট নিয়োগ করারও বিধান আছে। কিন্তু আমাদের মক্কার হজ্জ মিশনের কার্যক্রমে মনে হয়, এটি একটি সৌদি বাংলা পোস্ট অফিসে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ সৌদি সরকার চিঠিপত্র যা দেয় দোভাষী দিয়ে তার তরজমা করে হজ্জ মিশন তা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। বাস্তব অবস্থা তুলে ধরতে পারলে সৌদি সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছুই আনা সম্ভব। রোহিঙ্গা আশ্রয়দান সহ আরো নানা কারণে সৌদি সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আমরা যারা সৌদি যাতায়াত করি তারা তা উপলব্ধি করি। এর একটি জ¦লন্ত উদাহরণ- সারা বিশে^র জন্য এজেন্সী প্রতি হজ্জযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা ৫০০। শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য সর্ব নিম্ন কোটা ২৫০।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
সুষ্ঠু হজ্জ ব্যবস্থপনার বৃহত্তর স্বার্থে ২০২৪ সনের হজ্জ ব্যবস্থাপনার সকল প্রতিবন্ধকতা দ্রুত নিরসনের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ অত্যন্ত বিনয়ের সাথে কামনা করছি।
আমাদের অনুরোধ:
১। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশী সকল হাজীর মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ্জ সিস্টেমে আপডেট করা প্রয়োজন।
২। দ্রুত ফাইনাল ফ্লাইট সিডিউল ঘোষণা ও অপারেটিং সকল এজেন্সীর হজ্জযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৪। অপারেটিং এজেন্সীর মোনাজ্জেমদের জন্য মোনাজ্জেম ভিসার দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক। অথবা মিশন ভিসা শুধুমাত্র বাড়ী ভাড়ার কাজে ব্যবহারের ঘোষণা দিয়ে পরবর্তীতে অন্যান্য বছরের ন্যায় মোনাজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন।
৫। হজ্জযাত্রীর আনুপাতিক হারে সরকারী ও বেসরকারী হাজীদের জন্য বারকোড ভিসা বিতরণ নিশ্চিত করা ন্যায় ও ইনসাফের দাবী।
৬। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা দরকার। অপারেটিং হজ্জ এজেন্সীর একাউন্টে বিগত বছরের মতো যার যার একাউন্টে সে রিয়াল পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগছে। ভিসা করার সময় যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তবে ঐ হাজীর আর হজ্জ করা সম্ভব হবে না। সৌদি সরকারের বিবিধ চার্জ একেবারে চূড়ান্ত হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার।
৭।মেনেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়িঞ্জা টীকা প্রদানের দ্রুত ব্যবস্থা করা হোক।
৮। ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের ন্যয় সর্বশেষ হজ্জ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখতে হবে। অতীত ইতিহাস সাক্ষী- অনেক হজ্জযাত্রী সকল প্রস্তুতি গ্রহণের পর মৃত্যুবরণ করেন, কেউ বা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে যান, বিভিন্ন এক্সিডেন্টের কারণে অনেকে শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও হজ্জে যেতে পারেন না। তখন তাদের স্থলে যদি অন্য হাজীর ভিসা করা না যায় তবে যিনি হজ্জে যেতে পারলেন না তার সম্পূর্ণ টাকাই গচ্ছা যায়। ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে প্রচুর অর্থ অহেতুক সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে পারলে সৌদি সরকার বাস্তব অবস্থা অবশ্যই বিবেচনা করবেন।
পরিশেষে বলতে চাই- আমরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর উপর পূর্ণ আস্থাবান। আমরা আশা করি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সদয় দৃষ্টি দিলে এসব জটিলতা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর এসব জটিলতা নিরসন না করে হজ্জ এজেন্সীকে হজ্জ আইনে শাস্তির হুমকি দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। যারা বিধি মোতাবেক কাজ করবে না তারা আইনের আওতায় আসবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখানে যে সব সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরা হয়েছে এগুলোর সমাধান করার দায়িত্ব ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মক্কার হজ্জ মিশনের। যার যে কাজের দায়িত্ব তিনি সে কাজ যথাযথ ভাবে যথা সময়ে না করলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্টদের উপরই বর্তায়। দেশ ও জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে এবং আল্লাহর মেহমানদের কল্যাণে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীকে বিষয়গুলো অবহিত করলাম। আশা করি সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলোকে সদয় বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। সুষ্ঠু হজ্জ ব্যবস্থপনায় আমরাও আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন আল্লাহর মেহমানদের সকল কাজ সহজ করে দেন এবং পবিত্র হজ্জের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা আল্লাহ তাআলা যেন আরো বাড়িয়ে দেন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
অপারেটিং হজ্জ এজেন্সী মালিকদের পক্ষে-
হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন
স্বত্বাধীকারী
আল-কুতুব হজ্জ ট্রাভেলস
হজ্জ লাইসেন্স নম্বর ০৬৭১