একটি শহরে বা এলাকায় যদি শিশুদের খেলার অধিকার না থাকে, তারা যদি নিরাপদ অনুভব না করে তবে সে শহর শিশুবান্ধব হতে পারে না। শিশুবান্ধব শহর গড়ে তোলা হলে নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের জন্যই প্রবেশগম্য ও নিরাপদ শহর নিশ্চিত করা সম্ভব। নগর পরিকল্পনায় শিশুদের মতামতের প্রতিফলন না থাকায় বাংলাদেশে শিশুবান্ধব নগর নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ কর্মশালার মাধ্যমে শিশু ও যুববান্ধব নগর তৈরিতে স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদী কি ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন তা শিশু ও যুবদের মাধ্যমেই চিহ্নিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ পরিকল্পনাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট- এর কৈবর্ত সভাকক্ষে ‘শিশু ও যুববান্ধব শহর তৈরি’ শীর্ষক চার দিনব্যাপী (২১,২২,২৩,২৪ অক্টোবর ২০২৪) আয়োজিত দুটি কর্মশালা থেকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ আয়োজনে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মিঠুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক মাতলুবা খান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি’র সহযোগী অধ্যাপক মোঃ রাশেদ ভূঁইয়া, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম সুজন, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এমএ মান্নান মনির, ইউগ্লেনা গেংকির টিম লিড মোঃ শাহিদ আলম চৌধুরী, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, হেড অব প্রোগ্রাম টিসি-এনসিডি সৈয়দা অনন্যা রহমান। এছাড়াও ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা সহকারী এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তাবৃন্দ। চার দিনব্যাপী আয়োজিত কর্মশালা দুটিতে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের ৮-১২ বছরের ৩০ জন এবং ১৩-১৭ বছর বয়সের ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা বলেন, একটি এলাকা বা শহরকে একটি শিশু যেভাবে অনুভব করে বা পর্যবেক্ষণ করে তা অনেক সময়ই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ করেন না। শিশু ও যুবদের চাহিদার প্রতিফলন যদি একটি শহরে থাকে তাহলে সকলের জন্য নিরাপদ, প্রবেশগম্য তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি শহর গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু প্রকল্পভিত্তিক পরিকল্পনা না করে, শিশুদের প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে শিশু ও যুববান্ধব শহর তৈরি সম্ভব বলে আমাদের বিশ্বাস।
কর্মশালা দুটিতে শিক্ষার্থীরা রায়েরবাজার এলাকা নিয়ে কাজ করে। কর্মশালায় শিশুরা এলাকাটির বিভিন্ন স্থান বিষয়ে তাদের অনুভূতি, নিরাপত্তাবোধ, যাতায়াতের মাধ্যম, সংঘটিত কার্যক্রম, সামাজিকীকরণের সুযোগ ইত্যাদি চিহ্নিত করে। মাঠকর্মের মাধ্যমে তারা এলাকার বিভিন্ন রাস্তা পর্যবেক্ষণ করে ও তার তথ্য তুলে ধরে। শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণে এলাকার অভ্যন্তরে ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা, জলাবদ্ধতা, ইভটিজিং, মাদক সেবন, আবর্জনা, পর্যাপ্ত গাছ না থাকা, আলোর স্বল্পতা, খেলাধূলার সুযোগ না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যা উঠে আসে। এ সকল সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে কিভাবে একটি শিশু ও যুববান্ধব শহর গড়ে তোলা যায় তা শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে মডেল তৈরির মাধ্যমে উপস্থাপন করে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা এলাকার উন্নয়নে স্বল্প মেয়াদে পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা, গাছ লাগানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা; মধ্য মেয়াদে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, রাস্তা মেরামত, শিশুবান্ধব এলাকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ, দীর্ঘমেয়াদে নতুন খেলাধূলার জায়গা সংস্থান, সামাজিকীকরণ ও মেধাবিকাশের জন্য এলাকার অভ্যন্তরে লাইব্রেরী, কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ তুলে ধরে।
Post Views: 115
Like this:
Like Loading...
Related