এক দোকানে গিয়েছিলাম, তখনও সন্ধ্যা হয়নি। ফুটপাতে ভাসমান স্পঞ্জ স্যান্ডেলের দোকান।
স্যান্ডেলের দাম ৬০ টাকায় নিলাম। কিন্তু আমার কাছে তো ভাংতি নেই, ছিল মাত্র ১০০০ টাকার নোট।
দোকানদার নিজে থেকেই বললেন— “সমস্যা নাই দেন”।
আরো কয়েকজন ক্রেতা তখন স্যান্ডেল দেখছিল।
ঠিক তখনই আমার মোবাইলে কল আসে। কথা বলতে বলতে দোকানির দেওয়া বাকি টাকা পকেটে গুজে চলে আসি। অন্যমনস্ক থাকার কারণে টাকাটা গুনে নেওয়া হয়নি, যদিও সেটা করা উচিত ছিল।
রাতে বাসায় ফিরে টাকা বের করলাম। দেখি, তিনটা ৫০০ টাকার নোট! সর্বনাশ!
দোকানদার স্যান্ডেলের দাম তো রাখেনইনি, উল্টো ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে দিয়েছেন!
আমার এতটা সততা নেই যে আনন্দ পাইনি— একটু খুশিই হয়েছিলাম।
কিন্তু কয়েক মিনিট পর থেকেই ভিতরে অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো।
লোকটার সারাদিনের কষ্টের আয় হয়তো এই ৫০০ টাকা, যা এখন আমার কাছে!
তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হলাম, লোকটাকে বের করতেই হবে!
প্রায় আধা ঘণ্টা খুঁজেও পেলাম না। এই শহরে শত্রুর দেখা সহজে মেলে, কিন্তু হারানো মানুষের না!
রাতটা ভালো কাটলো না। সকালেও খুঁজতে গেলাম, পেলাম না।
দুপুরে গিয়ে অবশেষে পেয়ে গেলাম তাকে।
টাকাটা ফেরত দিলাম।
লোকটার হাসি বলে দিচ্ছিল, গতরাতেও তিনি হয়তো অনেক হিসাব কষে এই টাকা মেলানোর চেষ্টা করেছেন, পারেননি।
এবার মিলে গেল!
তিন মাস পর ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম। বাসের যাত্রাবিরতিতে এক হোটেলে খেতে নামলাম।
খাওয়া শেষে বাসে উঠে দেখি, সর্বনাশ!
আমার কাঁধের ব্যাগটা হোটেলেই রেখে এসেছি!
ব্যাগে ছিল প্রায় ১০,০০০ টাকা আর একটা মোবাইল।
তৎক্ষণাৎ বাস থেকে নেমে পড়লাম।
প্রায় ৪০ মিনিট পর হোটেলে পৌঁছালাম, কিন্তু ব্যাগ নেই!
চোখে পানি চলে এলো, এতদিনের সঞ্চিত টাকা…
ধীরে ধীরে আশা ছেড়ে দিচ্ছিলাম।
তখনই পেছন থেকে এক কিশোর ডেকে বলল—
“ভাই, আপনার ব্যাগটা এখানে রেখে গিয়েছিলেন!”
ছেলেটি নাকি আমাকে অনেকবার ডেকেছিল, কিন্তু আমি শুনিনি।
ব্যাগ খুলে দেখি, সবকিছু আগের মতোই আছে!
হিসাব মিলাচ্ছি—
হয়তো সেই স্যান্ডেলওয়ালার উপকারের প্রতিদানই আজ ফিরিয়ে দিলেন কেউ!
আপনি কারও উপকার করলে সেটি কখনো বৃথা যায় না। হয়তো যার উপকার করলেন, সে আপনাকে ফেরত দিতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ অন্য একজনের মাধ্যমে আপনাকে ফিরিয়ে দেবেন, ইনশাআল্লাহ!
বিশ্বাস রাখুন, উপর থেকে কেউ একজন আমাদের জীবনের সুতো টানছেন!
– সংগৃহীত