তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী-১ সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক সময়ের অবিসংবাদিত নেতা, বর্ণাঢ্য
রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পাঁচন্দর ইউপির দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান, মুন্ডুমালা পৌরসভার দু’বারের সাবেক মেয়র তারকা খ্যাতি সম্পন্ন বর্ষিয়ান রাজনৈতিক ও জননেতা গোলাম রাব্বানি রাজনীতিতে তাঁর হারানো গৌরব ফেরাতে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। রাব্বানীর আগমনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। এতে প্রামণ হয় রাব্বানীর মতো নেতৃত্বকে মাইনাস করা যায় না, সমঝোতা করতে হয়। তৃণমুলে রাব্বানীর যেই সমর্থন তাতে তাকে মাইনাস করা হলে আওয়ামী লীগের সিংহভাগ কুটকৌশলকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিবেন, তাতে আওয়ামী লীগর ঘর বাঁচানো দায় হবে। এসব বিবেচনায় তানোর আওয়ামী লীগের প্রাণ রাব্বানী তাকে ছাড়া আওয়ামী লীগকে বাঁচানো দায়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক সময়ের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই নেতা এমপির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। কিন্ত্ত তিনি তাঁর হারানো গৌরব ফেরাতে ফের তৎপরতা শুরু করায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নয়াসমিকরণের সুত্র্রপাত হয়েছে। এদিকে রাব্বানীকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন নিরব ছিলেন। সম্প্রতি আগামী এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়ে পৌর নির্বাচনে নিজে প্রার্থী না হয়ে তার মনোনিত প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। তানোর মুন্ডুমালা, গোদাগাড়ী ও কাঁকনহাট চারটি পৌরসভায় রাব্বানী শিবিরের মনোনিত প্রার্থীদের নিরুঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর জনপ্রিয়তা ও সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। এসবের সঙ্গে মুন্ডুমালা স্কুল জাতীয়করণ রাবাবানী আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
স্থানীয়রা বলছে, এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হলে দুটি কারণে রাব্বানী অন্যদের খেকে এগিয়ে রয়েছেন একটি আওয়ামী লীগের ভোট তো তিনি পাবেনই, অপরটি তার শত বছরের পারিবারিক ঐতিহ্যর কারণে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরের একটি বড় অংশের ভোটও পাবেন তিনি। দেশে বোধাহয় রাব্বানীর পরিবারই একমাত্র পরিবার যারা প্রায় শত বছর বংশপরম্পরায় জনপ্রতিনিধি হয়ে আসেছেন, তিনিও তিনপ্রজন্মের জনপ্রতিনিধি। এমপি নির্বাচনে রাব্বানীর দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক কর্মী বাহিনী, পারিবারিক ঐতিহ্যসহ সব কিছু অনুকুলে থাকলেও মনোনয়ন প্রাপ্তির অশুভ প্রতিযোগীতায় তাকে বার বার পিছু ফেরাতে বাধ্য করেছে। অথচ ভোটারদের মানসিকতা, নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হলে রাব্বানীর মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গনে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে তিনি ‘রাব্বানী ভাই’ বলে পরিচিত, সবার কাছে তিনি একজন সৎ রাজনীতিকের প্রতিকৃতি, এই অঞ্চলের মানুষ রাজনীতিতে সৎ নেতার উদাহারণ দিতে গিয়ে সবার আগে রাব্বানীর নামটি উচ্চারণ করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি যেমন বিলাসবিমূখ সাদামাটা, তেমনি সরস কৌতুকপ্রিয়, কর্মী ও জনবান্ধব রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও সর্ব মহলে প্রশংসিত। তাঁর বাড়িতে বা পৌরসভায় গিয়ে অন্তত্ব এক কাপ চা অথবা মিষ্টি খাননি, এলাকায় এরকম একজন মানুষকেও খুঁজে পাওয়া দুঃস্কর। এমনকি বিরোধীমতের রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীসমর্থকরা ‘রাব্বাসী ভাই’ সম্বোধন করে খুব সহজেই তার কাছে যেকোন সমস্যা তুলে ধরে সহযোগীতা চাইতে পারেন। তিনি রাজনৈতিক সহবস্থানে বিশ্বাসী তিনি মনে করেন রাজনীতি মানুষের জন্য আর রাজনীতিতে ভিন্ন মতের মানুষ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক এসব কারণে যে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কোনো সমস্যায় পড়লেই সমাধান পাক না নাই পাক সহজেই ‘রাব্বানী ভাই’সম্বোধন করে তার কাছে ছুটে যায়। তিনিও সমস্যার সমাধান করতে পারা না না পারা সেটি কোনো বিষয় নয় তিনি তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন পারলে সমাধান করেন না পারলে পথ দেখিয়ে দেন। আর এসব কারণেই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘রাব্বানী ভাই’ বলে পরিচিত। দশ বছরের শিশু থেকে পঞ্চাশ বছরের বৃদ্ধ সকলের প্রিয় মানুষ ‘রাব্বানী ভাই’ উপজেলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত সব প্রান্তেই তার সরব বিচরণ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তাকে তাদের দলে ভেড়াতে বহু প্রলোভন দেয়া হলেও তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শচ্যুত হয়ে তাদের ডাকা সাড়া দেননি। দলমত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে এখানো তিনি সমান জনপ্রিয়, এখানো পাড়া-মহল্লা বা যেকেনো স্থানে দাড়ালে তার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের জন্য শত মানুষের ভিড় জমে তারা তার সঙ্গে কথা বলতে পারলেও যেনো ধন্য বিষয়টি এমন।
জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তথা কথিত অপারেশন ‘কিন হাট’-এর সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চেনামূখের অনেক হেভিওয়েট নেতা এলাকা ছাড়া হয়ে আত্মগোপণ করেছিল, তবে ব্যতিক্রম ছিলেন একজন গোলাম রাব্বানি তিনি তখনও বীরদর্পে রাজনীতির মাঠে চষে বেড়িয়েছেন ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন। আবার দেশে ওয়ানইলেভেনের সময়ও বিএনপি-আওয়ামী লীগের চেনামূখ অনেক নেতা এলাকা ছাড়া হয়ে আত্মগোপণ করেছিলেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম প্রতিকুল অবস্থার সময়েও গোলাম রাব্বানির আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা ছিল, তার কিছু হলে জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে সেই আশঙ্কায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও এক ধরণের ভীতি ছিল বলে তারাও রাব্বানিকে সম্মান দেখিয়ে গেছেন। অথচ চরম প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও গোলাম রাব্বানী এলাকায় থেকে রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা করার পাশপাশি নেতাকর্মীদের আগলে রাখেন ও এলাকায় চরদলীয় জোট সরকারে বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা এখানো রাজশাহী শহরে বসবাস করে ব্যক্তিগত কাজ ছাড়া তেমন নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করেন না নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখারও প্রয়োজন মনে করেন না। অথচ ব্যতিক্রম গোলাম রাব্বানী তিনি এখানো গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন ও নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তিনি এক টানা প্রায় ২০ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও তাঁর অর্থলিপসা না থাকায় তিনি সেই পথে পা বাড়াননি। এমনকি তার পরে রাজনীতিতে এসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনুপ্রবেশকারী, তল্পিবাহক অনেক হাইব্রিড নেতা কোটি কোটি টাকার সম্পদ আহরণ করেছেন, ঢাকা, রাজশাহী শহরে বাড়ি, একাধিক গাড়ী, পুকুর, আমবাগান ইত্যাদির মাধ্যমে টাকার কুমির হয়েছে। এমনকি তার হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করে অনেকে এমপি-মন্ত্রী-মেয়র, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন।
অথচ এখানো রাব্বানী শহরে একটি ব্যবসা বা বাড়ি নির্মাণ করতে পারেননি। এখানো বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়েই রাজনীতি করে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে গোলাম রাব্বানি বলেন,তিনি তার পূর্ব পুরুষদের অনুসরণ করে রাজনীতি করেন। তিনি বলেন, অবৈধ পথে বিত্তশীল হয়ে নয় সাধারণ মানুষের কাজ করে সাধারণ মানুষের মাঝে তিনি বেচে থাকতে চান সেই প্রত্যয় ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করেই তিনি এখানো রাজনীতি করে চরেছেন। এসব বিবেচনায় এমপি ফারুক চৌধূরীর পরবর্তী নেতৃত্ব হিসেবে গোলাম রাব্বানিকে বিবেচনা করা হয়।
রাজশাহী তথা বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম রাজনৈতিক সচেতন ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে গোলাম রাব্বানির জন্ম এবং বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। ব্রিটিশ আমল থেকে এখানো গোলাম রাব্বানির পরিবারের কেউ না কেউ জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গোলাম রাব্বানির দাদা প্রয়াত হাজী কবির উদ্দীন মন্ডল পঞ্চায়েত প্রধান ও ইউপি প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক টানা প্রায় ৩৫ বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার হাত ধরেই তার পুত্র প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ আলী মাহাম পাচন্দর ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ও ৭৫ থেকে ৯২ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রায় সাড়ে ৮ একর সম্পত্তি দান করে ফুটবল মাঠ তৈরী ও সাড়ে ৩ একর সম্পত্তি দান করে সেখানে একটি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। আবার কলমা ইউপির কন্দপুরে তিন একর জমি দান করে কন্দপুর স্কুল নির্মাণ করেছেন। তার হাত ধরেই তার সুযোগ্য পুত্র গোলাম রাব্বানী দু’বার পাচন্দর ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে দু’বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুবার মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও প্রায় সাড়ে ৩ একর সম্পত্তি দান করে সেখানে প্রকাশনগর আদর্শ গ্রাম করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে রাজশাহী জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি ছাত্র জীবনে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। খোজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে রাব্বানির আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা রয়েছে। গোলাম রাব্বানী গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে থেকেছেন সামনের সারিতে দিয়েছেন সফল নেতৃত্ব। দল ও জনগণের অধিকার রার তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ, কর্মী, জনবান্ধব, পরীতি ও লড়াকু সৈনিক। দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় থাকলেও এবং অর্থ উপার্জনের অনেক সুযোগ থাকার পরেও অবৈধ অর্থের মোহে বা লোভ-লালসার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেননি। তিনি তৃণমুল নেতাকর্মীদের সঙ্গে থেকে এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন সংগ্রাম। এই সংগ্রাম রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন সূচনার সংগ্রাম। তিনি আওয়ামী লীগকে অর্থ নয় মেধার কাছে জিম্মি রাখতে চান। রাব্বানী বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের উন্নয়ন ধারাকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করতে চান।
Post Views: 310
Like this:
Like Loading...
Related