মোঃ আশরাফুল আলম
দিনাজপুর প্রতিনিধি;
দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার শমশেরনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালে ক্যাম্পাসে চাতালের মতো করে ধান ও ভ‚ট্টা শুকানো,গরু,ছাগল চরানো চারন ভূমি হিসেবে পরিনিত হয়ে গেছে । বিদ্যালয়ে প্রায় সময় শিক্ষকদের উপস্থিতি কম থাকে ফলে পড়া লেখার ঠিকমতো হয় না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শুনেও শুনেন না বলে অভিযোগ করলেন শমসেরনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকগন।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার ৭ নং শিবনগর ইউনিয়নের শমসেরনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীরা স্কুলের সীমানার বাইরে ঘূরাফিরা করছে। বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের ঘোরাঘুরির কোনো জায়গা নেই। কারণ পুরো মাঠজুড়ে ধান ও ভ‚ট্টা শুকানো হচ্ছে চাতালের মতো করে। এমন চিত্র প্রতিদিনেই দেখাতে পাওয়া যায় বলে জানান এখানকার এলাকাবাাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে চাতাল হিসেবে ব্যবহার করছেন স্কুলের সভাপতির ভাতিজা মনোয়ার হোসেন। সভাপতির আরেক ভাতিজা আনোয়ার হোসেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্কুলের রুমে নিয়মিত প্রাইভেট পড়ান। এর আগে প্রাইভেট পড়ানো অবস্থায় এক ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কও স্থাপন করেন এবং পরে একসময় ধরা পড়লে গ্রামবাসী জোর করে তার সাথে ঐ মেয়ের বিবাহ পড়ে দেন।
ক্লাসরুমগুলিতে গেলে দেখা যায় ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছেনা। শিক্ষার্থীরা বলেন, স্যারেরা ঠিকমতো ক্লাস নেয় না। স্যারদের ডেকে এনে ক্লাস করতে হয়। শিক্ষকদের কমনরুমে গেলে শিক্ষকের উপস্থিতি কম পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষকরা ঠিকমতো স্কুলে আসেনা এবং ক্লাসও নিয়মিত করেন না এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ে পরপর দুইদিন গেলেও দেখা মেলেনি প্রধান শিক্ষকের। প্রধান শিক্ষকের অফিসিয়াল কোনো কাজ না থাকলেও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন। স্কুলে নিয়মিত আসেন না। প্রথমদিন প্রধান শিক্ষককে স্কুলে না পেয়ে মুটো ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় দিনে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে গেলেও আসলেও তাকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি স্কুলে এসে স্বাক্ষর করেই ব্যক্তিগত কাজে চলে যান। তার স্কুলে না থাকার বিষয়ে তৎক্ষনাৎ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুল আলম কে ফোনে জানানো হলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে তার স্কুলে থাকার কথা কেন নাই আমি বিষয়টা দেখছি। বলে সাংবাদিকদের দায় সরা কথা বলে চুপ থাকেন।
শমসেরনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের আরো কিছু অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের জনবল বৃৃদ্ধির লক্ষে তিনটি পদে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। গত ২৬ মে ছিলো দরখাস্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়। কিন্তু সরেজমিনে গেলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি দুজন মিলে ঐ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। স্কুলের পরিচালনা কমিটির সদস্য বিষয়টি জানেননা। এমনকি রেজুলেশও করা হয়নি এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রধান শিক্ষক সভাপতির মাধ্যমে রেজুলেশন করে নেন। ২৬ তারিখ দরখাস্ত জমা দানের শেষ সময় থাকার পরেও গত ২৮ তারিখ সরেজমিনে গেলে দরখাস্ত জমা নিতে দেখা যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী মিজানুর রহমান কমল বলেন, আমার ছোট মেয়ে মাগফিরাতুন জান্নাত মিথিলা শমসেরনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেনীতে পড়েতো প্রায় সময় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিত থাকে না। এখানকার শিক্ষার মান এতোই খারাপ যে বাদ্য হয়ে আমি আমার ছোট মেয়েকে এই বিদ্যালয় থেকে বের করে অনত্র ভর্তি করেছি।
শমসের নগর আদর্শ বিদ্যালয়ের সামনের মুদি ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক ঠিক মতো আসেনা। এখানকার শিক্ষার মান নিন্মমানের। সঠিক তদারকির না থাকার কারনে দিনে দিনে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিচে পড়তে শুরু করেছে। আমরা চাই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন বিষয়টি গুরুপ্ত দিয়ে বিদ্যালয়টিকে বাঁচিয়ে দিক।
অভিযোগের পর এবিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করে আবারো দুই দিন বিদ্যালয়ে গেলেও । তাকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায় নাই। বিদ্যালয়ে থেকে মোবাইলে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া য়ায়।
প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে না পেরে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে সভাপতি বলেন, আমি মূর্খ মানুষ কথা বলতে পারিনা। আমি কথা বলতে পারবোনা। তার ভাতিজা স্কুলের ক্যাম্পাসকে চাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন গ্রামের অনেকে ধান শুকায়।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নুর আলম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, শমসেরনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের যে অভিযোগগুলো আপনাদের কাছে শুনলাম। নিয়োগের বিষয় আমি কিছু জানিনা, নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের অনুপস্থিত থাকা এবং বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চাতালের মতোকরে ধান ও ভু‚ট্টা শুকানোর বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Post Views: 201
Like this:
Like Loading...
Related