রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১৪ সালে একটা নির্বাচন হয়েছিল, সেটা কি ধরণের নির্বাচন হয়েছিল তা সবাই জানে। ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। রংপুরের মানুষও ভোট দিতে পারেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগের রাতেই সব ভোট হয়ে গিয়েছিল। যে সরকারের আমলে পরপর দুটি নির্বাচন ডাকাতি হয়ে যায়, চুরি হয়ে যায়, জনগণ ভোট দিতে পারে না সেই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করা যায় না। গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের রোডমার্চের উদ্বোধনী পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল রংপুর থেকে দিনাজপুর অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চ আয়োজন করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু বিএনপি নয় বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। বাম গণতান্ত্রিক জোট আমাদের সঙ্গে নেই কিন্তু তারাও ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। আওয়ামী লীগ জনগণকে মিথ্যা বোঝানোর চেষ্টা করছে বলে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ সরকার ভোট দিতে চেয়ে ভোট দেয়নি এবং মানুষ ভোট দিতে পারেনি। অথচ আমাদের এ দেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগ আটক করে রেখেছে। আমাদের তরুণদের আশা-ভরসার জায়গা, তরুণরা যার দিকে তাকিয়ে আছে সেই নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, সাজা দিয়ে তাকে দেশে আসতে দেয় না। তাকে নির্বাসিত করে রেখেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারুণ্যের এ রোডমার্চ শুরু হলো। যেদিন আমরা এ সরকারের পতন ঘটাতে পারব সেই দিন রোডমার্চ শেষ হবে। আমাদের দাবি খুব পরিষ্কার, আপনি (শেখ হাসিনা) এখনই পদত্যাগ করেন। আপনাকে এ দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। পার্লামেন্ট ভেঙে দিন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। কারণ আপনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে, জনগণ অংশগ্রহণ করবে। যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিয়ে পার্লামেন্ট তৈরি করবে, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবে। যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যেতে পারি তাহলে আমরা নির্বাচিত হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবো। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের নেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছিল। এখন তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত অসুস্থ, ডাক্তাররা সবাই খুব চিন্তিত। এ সরকারের কাছে তার পরিবার এবং আমরা তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। কারণ ডাক্তাররা বলেছেন এখানে তার চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ তাদের আর নেই। তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের কোনো কথাই শুনছে না। অথচ তারা নিজেরা (এমপি-মন্ত্রীরা) চিকিৎসার জন্য বারবার বিদেশ যাচ্ছে। এক-এগারোর সময় বর্তমান স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী তিনিও বন্দি ছিলেন, তখন তিনি কানের অসুখের কথা বলে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আমেরিকা গিয়েছিলেন। অথচ সেই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গত পনেরো বছর ধরে লক্ষ্য করা হচ্ছে এ সরকার কলাকৌশল করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিত ও সুচিন্তিতভাবে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষ অসহায় ও অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। চাল, তেল, লবণসহ সবকিছুর দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, কিন্তু মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। লোডশেডিং হতেই আছে। কৃষিকাজে সেচ দিতে পারে না। ব্যাংক থেকে দুর্নীতি করে, চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। অর্থনীতি ক্রমেই নিচের দিকে নামছে, ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। পত্রপত্রিকা খুললেই দেখবেন রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রিজার্ভ তো সরকার চুরি করছে, সেই কারণে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। এ সরকার অর্থনীতিকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, নিজেরা দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করেছে। রংপুর থেকে তারুণ্যের রোডমার্চ শুরু করা প্রসঙ্গ মির্জা ফখরুল বলেন, রংপুরের একটা বিরাট ঐতিহ্য আছে। সেই ঐতিহ্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়াবার ঐতিহ্য। রংপুরে ব্রিটিশ আমলে কৃষকদের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তেভাগা আন্দোলন হয়েছিল। রংপুরকে নিয়েই আপনাদের কৃতী সন্তান সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন নূরলদীনের সারাজীবন। সেই নূরলদীনের বিপ্লব বিদ্রোহ রংপুর থেকেই, সেদিন নূরলদীন ডাক দিয়েছিল জাগো বাহে কোনঠে সবায়। এখন রংপুর থেকেই আবার তরুণরা বাংলাদেশের মানুষকে ডাক দিচ্ছে ভয়াবহ একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদ, লুটেরা সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ। জাগছে তারুণ্য জাগছে দেশ, টেইক ব্যাক বাংলাদেশ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে রংপুর শহর। এছাড়া রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষকদল, তাঁতী দল, মহিলা দল, ওলামা দল এবং জাসাসের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় জাসাস শিল্পীদের পরিবেশনায় দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের রোডমার্চের প্রথম পর্ব শুরু হয়। পরে পথসভা শেষে গাড়িবহরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত তারুণ্যের রোডমার্চ রংপুর থেকে দিনাজপুর অভিমুখে যাত্রা করে। পথিমধ্যে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে পথসভায় বক্তব্য রাখেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাগণ।
১৬ বছর পর কারামুক্ত বিডিআরের ১৬৮ সদস্য
দীর্ঘ ১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া বিডিআরের ১৬৮ জন সদস্য। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকা...