:: বেলাল আজাদ :: (রচনা, ২৫ মে ২০১৭ ইং)
২০০৪ সালে দৈনিক আজকের দেশবিদেশ (কৃষি অফিস রোডে) অফিসে সিনিয়র সাংবাদিক হাসানুর রশিদ (বর্তমানে- দৈনিক হিমছড়ি সম্পাদক) ও এস.এম. মোহাম্মদ আনোয়ার (বর্তমানে- উখিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি ও কক্সবাজারপোষ্ট সম্পাদক) কে ‘আমি সাংবাদিক হতে চাই’ বলছিলাম, তখন এই দুই পেশাগত অভিজ্ঞ ও গুণী সাংবাদিকদ্বয় কথা প্রসঙ্গে বলে দিলেন, ‘নানী-দাদী মারা গেলে, অমূক সাংবাদিকের নানী/দাদীর মৃত্যুর’- সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিক হওয়াটা জরুরী নয়!’ তাঁদের সেই কথাটা আমার কানে এখনও প্রায়ই বাজে!
হাল সময়ে এই শ্রদ্ধেয় দুই সাংবাদিকের কথার রেশ ধরে বলতে ইচ্ছে করে,’ কোন কোন সাংবাদিকের নানী/দাদীর মৃত্যুর সংবাদ দূরে থাক, নিজের মৃত্যুর সংবাদও কী ঠিক মত পত্রিকায় আসে?
তখন আমার লেখালেখির সূচনা কালে শ্রদ্ধেয় হাসানুর রশিদ ও সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার ভাই অবশ্য লেখালেখির জন্য খুব উৎসাহ দিতেন। তখনকার আজকের দেশবিদেশ সাহিত্য ও কিশোর কানন বিভাগে নিয়মিত গল্প-কবিতা লিখতাম। তখন আমি ইনানী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতার পাশাপাশি এই দুই সাংবাদিকের পশ্রয়ে ইনানী প্রতিনিধি ও জালিয়াপালং উপকূলীয় প্রতিনিধি হিসেবে টুকটাক সংবাদও লিখতাম, তাঁরা ছাপাতেন। তখন থেকেই লেখালেখি তথা মিড়িয়া জগতের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ি। ২০০৫-২০০৬ সালে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দৈনিক কর্ণফুলীর জামালখানস্থ মূল অফিসে শিক্ষানবীশ স্টাফ রির্পোটার ও পশ্চিম পটিয়া-কর্ণফুলী থানা প্রতিনিধি এবং দৈনিক সংবাদে কর্ণফুলী থানা প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদপত্রে জড়িত ছিলাম।
তৎপরবর্তীতে ২০০৭-২০০৮ সালে নিজ শহর কক্সবাজারে ফিরে এলে- নয়নকক্স নিউজ, কক্সবাংলা ডটকম, দৈনিক কক্সবাজারবাণী ও দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকায় কক্সবাজার আদালত প্রতিবেদক হিসেবে দীর্ঘ কয়েক বছর রিপোর্টারী করেছি, দৈনিক ইনানীতেও কয়েক মাস। অধুনালুপ্ত ‘কক্সবাজার কোর্ট রিপোর্টার ইউনিটি’ প্রতিষ্টায় (২০১৪ সালে) আমি প্রধান ভূমিকা রেখেছিলাম, যার সভাপতি ছিলেন উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান দুদক’র পিপি এডভোকেট মোঃ আবদুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বর্তমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউর রহমান।
ইতিমধ্যে কক্সবাজার আদালতে নিজ কর্ম ব্যস্ততায় ও ‘বাংলাদেশের আইন কানুন’ নামক দেশের স্বনামধন্য আইনী পরামর্শ, সেবা ও সংবাদ সংস্থাটির প্রকাশনা বিভাগে সম্পাদনার দায়িত্ব পালনে থাকায়, নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি করার সুযোগ আরও দূরত্বে সরে গেলেও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ভোরেরবার্তা ও ফাস্টনিউজবিডি ডটকম-এ জেলা প্রতিনিধির পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয়- দৈনিক বাকঁখালী, দৈনিক কক্সবাজারবাণী, দৈনিক ইনানী এবং নিয়মিত নিউজ পোর্টাল- কক্সবাজার নিউজ ডটকম, উখিয়া নিউজ ডটকম, কক্সবাংলা ডটকম, নিউজ কক্সবাজার ডটকম,সিএসবি২৪ ডটকম, কক্সবাজার জার্নাল ডটকম, সাগরকন্ঠ ডটকম, টেকনাফ নিউজ ডটকম, চকরিয়া নিউজ ডটকম সহ ডজন খানেক সংবাদ মাধ্যমে লেখালেখি করি। তবে এসব পত্রিকা অফিসে আমার কখনো যাতায়াত বা সম্পাদক সহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে কোন পরিচয় এমনকি দেখা-স্বাক্ষাও হয়নি! আমি লেখা পাঠাই, তাঁরা ছাপান/আপডেট দেন।
এতদ্ কালে আমি কখনো কোন অফিস-আদালতে বা থানা-পুলিশে ও পরিচিত সমাজে এমনকি দীর্ঘ এক যুগের কর্মস্থল কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গনে কারও কাছে নিজেকে লেখক অথবা সাংবাদিক পরিচয় দিই নাই, কোন সুবিধা শভোগ করি নাই। কখনো এমন পরিচয় তুলে ধরার প্রয়োজন বোধও হয় নাই। তবে হাল আমলে মাঝে-মধ্যে যখন দেখি যে, ইচড়েপাকা, অজ্ঞ- অশিক্ষিত, ফেসবুকীয়-কপি/পেস্টীয়, চিটকে চোর- সন্ত্রাসী, টাউট-বাটপার, মাদকাসক্ত এমনকি মাদক ব্যবসায়ী পর্যন্ত কারণে/অকারণে ‘সাংবাদিক’র পরিচয় বহন করে বীরদর্পে আত্মা অহংকারে কত কী করে!
তখন নিজেকে নিয়ে একই সাথে আপসোস ও ক্ষোভ হয় এই কারণে যে, কেন আমি লেখক বা সাংবাদিক নই?
কেন আমি কোন প্রেসক্লাব বা সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য নই? কেন মিড়িয়া ও সংবাদকর্মীদের সাথে আমার এত দূরত্ব?
আমার লেখালেখি সহ সর্ব সূত্রে ও জন্ম-জন্মান্তরে পরিচিত এবং যার সাথে একত্রে একাধিক পত্রিকায় দুইজনের সাংবাদিকতা; যিনি আমার প্রতিবেশী-শ্রদ্ধেয় তিনি যদি ব্যক্তিগত কোন আক্রোশে চোখে চোখ রেখে বলতে পারেন, ‘তুমি সাংবাদিক নাকি?’
যখন দেখি আমার লেখা সংবাদ/প্রতিবেদন ও আইন-আদালত বিষয়ক রচনা/নিবন্ধন দীর্ঘ অর্ধ যুগেরও বেশী সময় ধরে প্রকাশকারী কোন নিউজ পোর্টাল আমার কোন প্রতিহিংসা পরায়ন প্রতিপক্ষের সাথে আত্মীয়তা অথবা প্রভাব-প্রলোভনের সুবাধে নিজেদের বিবেকবোধ ও নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে আমার বিরুদ্ধেই আমার লেখাই কপিপেস্ট করে স্বয়ং আমার বা সংবাদ সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য/মতমত ছাড়া, আগাগোড়া মিলহীন, মনগড়া, মিথ্যা সংবাদ আমার বিরুদ্ধেই মানহানিকর ভাবে প্রকাশ ও প্রচার করে!
তখন ‘আমারও সাংবাদিক হতে ইচ্ছে করে!’
দেশব্যাপী বহু আইনজ্ঞ, আইনের ছাত্র, আইন-আদালত সংশ্লিষ্ট এবং আইন বিষয়ক পাঠক সমাজে সমাদৃত আমার লেখা ‘মামলার কজলিষ্ট ও রি-কল কী?’, ‘মামলা-মোকদ্দমায় না জড়ানোর পরামর্শ’, ‘আদালতে মামলা করতে গিয়ে -যদি এমন হতো!’, ‘আমাদের বিচার ব্যবস্থা, বাস্তবতা ও ভোগান্তি’, ‘কারাগারের জান খালাসী, মৃত্যুই যাদের কারামুক্তি!’ ইত্যাদি আইন-আদালত বিষয়ক রচনা/নিবন্ধ গুলো দেশের অনেক উচ্চ আদালতের আইনজীবী, লেখকওফেসবুক ফেইজারেরা নিজেদের নামেই পোস্ট করে, আবার বেশ কয়েকটি লেখায় কয়েকটি জার্নাল লেখনীর সম্মানীও দেয়। আমার এমন সব লেখাগুলো গত কয়েক বছর ধরেই দেশের একাধিক ল’জার্নালে, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের পত্রিকায় ও পোর্টালে প্রকাশ হয়ে আসছে। এছাড়াও ২০১২ সালে কক্সবাজার সদর মডেল থানার পেছনে দৈনিক কক্সবাজারবাণী অফিসে সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় পত্রিকাটির আমরা প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক (বর্তমানেে: জনতার বাণী সম্পাদ) ফরিদূল মোস্তফা খান ও প্রবীণ সাংবাদিক আতাহার ইকবাল গুরুতর আহতের ঘটনায় দায়েরকৃত আলোচিত মামলাটির এজাহার, কক্সবাজার আদালতে আমার নিজ খরচে পিতামাতার ভরণপোষণ আইনের ১ম মামলা (সি.আর.নং-২৬৬/২০১৬), মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ১৫ ধারার দেশের একমাত্র মামলা(মানবপাচার নং-০৬/২০১৬), কক্সবাজারে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর যৌতুকের (সি.আর.নং-২০৬/ ২০১৬) মামলাগুলোর আর্জি আমারই লেখা।
এতকিছুতেও আমার আত্ম প্রচারণার অথবা নিজেকে লেখালেখি বা মিড়িয়া জগতের কেউ বলে পরিচয় দেওয়ার কোন আগ্রহ বা প্রয়োজন আমার ছিল না।
সে দিন (২০ মে ২০১৭ইং) কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নিজেকে স্বভাবগত কারণে লেখক বা সংবাদকর্মী পরিচয় দিতে পারিনি বলেই পুলিশ অফিসারেরা বিনা অপরাধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে এক তরফা ভাবে চরম নাজেহাল করে প্রতিউত্তরে আমি বলিনি, ‘শুধু কোর্টে কাজ করি না, লেখালেখি ও সাংবাদিকতাও করি, আমার যে লেখাটা এই সাংবাদিক কপি করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে পত্রিকাটা আপনার টে সাংবাদিক পরিচয়ে সুবিধা আদায়ে থানায় আসা হয় নাই বলেই, আমি অপরিচিত-ভাসমান ভ্রমে!’ সে দিনের বিভীষিকাময় সময়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতে খুব ইচ্ছে করেছিল। কিন্তু নিজের অভ্যাসগত মূখচোরা স্বভাবের কারণে ও নিজের ঢোল নিজে পেটাতে অনভ্যস্থ বলে পারিনি। তবে এমন কঠোর পরিস্থিতির কথা মনে হলে-
‘আমারও সাংবাদিক হতে ইচ্ছে করে!’
(বেলাল আজাদ, কক্সবাজার: লেখক ও সাংবাদিক)