রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: নতুন রূপে সেজেছে প্রাচীন স্থাপত্য নকশা ও আরবি হরফ মুদ্রিত ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের এক গম্বুজ মসজিদটি। স্থাপত্যটিকে ঘিরে শুরু থেকেই মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কে কখন এটি নির্মাণ করেছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে এলাকায় জনশ্রুতি আছে, কয়েকশত বছর আগে এক রাতে অলৌকিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে মসজিদটি। কালের বিবর্তনে মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পর মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি সংস্কার কাজ শেষ করে রং করা হয়েছে। দেখে মনে হয়, নবনির্মিত মসজিদ। যা এক নতুনমাত্রা যোগ করেছে দর্শনার্থীদের মধ্যে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি এক নজর দেখতে ভিড় করছে উৎসুক মানুষ। তবে পাশেই বড় একটি মসজিদ নির্মিত হওয়ায় ছোট মসজিদটিতে নামাজ আদায় করা হয় না। মসজিদটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর শহরের নুনিয়াগাড়ি গ্রামে অবস্থিত। এর পূর্বে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক ও পশ্চিম পাশ দিয়ে গেছে পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট সড়ক। দুই সড়কের ঠিক মাঝখানে নুনিয়াগাড়ী গ্রামের বুক চিড়ে নির্মিত পিচঢালা সড়কের দক্ষিণে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ মসজিদটি। পলাশবাড়ী জিরো পয়েন্ট চৌমাথা মোড় থেকে মসজিদটির দূরত্ব আধা কিলোমিটার। এটি দেশের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, যা প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ধারণা করা হচ্ছে আড়াইশত বছরের পুরোনো এ মসজিদটি এক কক্ষ বিশিষ্ট। এর উপরিভাগে একটি গম্বুজ এবং চার কোণায় রয়েছে চারটি পিলার। প্রাচীন এ মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন ইমামসহ চার থেকে পাঁচজন। মসজিদটির অভ্যন্তরে নামাজের জায়গা রয়েছে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে মাত্র ছয় ফুট। স্থানীয় কেরামত উল্লাহ মন্ডলের ছেলে কাদিরবক্স মন্ডলের নামে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু মসজিদটির নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এলাকাবাসীসহ তার বংশধরেরা বলেন, তিনি এটি নির্মাণ করেননি। নুনিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ও মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি রেজানুর রহমান ডিপটি বলেন, ধারণা করা হয়, এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলের। বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও সরকারিভাবে মসজিদটির ইতিহাস উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৯১ সালে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে আসেন আব্দুল মালেক। তৎকালীন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ছিলেন আব্দুর সবুর। তারা মসজিদটি পরিদর্শন করেন এবং এটির ইতিহাস উদ্ঘাটনের জন্য স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সদস্যরা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের মাস্তা এলাকার প্রাচীন লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার প্রাচীন সৌর মসজিদ দেখে ধারণা করা হয়, এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলের। কারণ নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলে নির্মিত ওই মসজিদ দুটোর হুবহু আদল-অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে পলাশবাড়ীর প্রাচীন এ এক গম্বুজ বিশিষ্ট সবচেয়ে ছোট মসজিদটি। তবে এর নাম নিয়ে ভিন্নমত দেন তিনি। মন্ডল পরিবারের সদস্য মসজিদ কমিটির সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল মতিন মন্ডল বলেন, মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০১৩ সালের ২ জুন মসজিদটি সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স¤পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে মসজিদটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্ব পাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। যেখানে নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি ডা. সায়াদ মিয়া বলেন, প্রাচীন এ অনন্য নিদর্শন রক্ষায় যুগযুগ ধরে বিভিন্ন দপ্তরে সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবশেষে বর্তমান কমিটির উদ্যোগে স্থানীয়দের সহায়তায় ঐতিহাসিক এ মসজিদটি সংস্কার করা হয়।
এইচআরডব্লিউ পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্বই দিয়েছিল
ঢাকা: ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-আন্দোলনে পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বই দিয়েছিল বলে জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য মানবাধিকার সংগঠন...