কিছু তৃষ্ণা আজীবন অধরাই থাকে। পছন্দের মানুষ, কাঙ্ক্ষিত চাকরি কিংবা
প্রত্যাশিত ঠিকানা- কোনদিন ধরা নাও দিতে পারে। মনের ঘরে গোপনে যা থাকে
সব প্রকাশ করার সুযোগ জীবনে নাও আসতে পারে। কল্পনার সুখ আর বাস্তব
পরিস্থিতি চরমভাবে ভিন্ন হতে পারে। যা চেয়েছি তা পাইনি আর যা পেয়েছি তা
চাইনি- সমীকরণ মিলতে না মিলতেও আয়ু ফুরিয়ে যেতে পারে। কোন ঠিকানায় সুখী
হতাম? কী পেলে ভালো থাকতাম? আমরা আসলে জানি না। একেক সময় একেক
জিনিস লোভনীয়-মোহময় মনে হয়। বাহির দেখে, চাকচিক্য দেখে মনে করি সুখ।
কল্পনা করি প্রশান্তি অথচ সেখানে অসুখ থাকতে পারে। কিংবা তপ্ত মরুর
বাতাস বইতে পারে!
আমি চেষ্টা করতে পারি, আমি আশা করতে পারি কিংবা আমি স্বপ্ন দেখতে পারি
কিন্তু ভাগ্য লিখতে পারি না। কোন এক মহাপরিকল্পনাবিদ যতন করে আমার
ভাগ্যলিপি লিখে দিয়েছেন। আমি একটি ফুল না পেয়ে হা-হুতাশে মুষড়ে পড়তে পারি
অথচ তিনি আমার জন্য গোটা বাগানটি রেখেছেন কিনা- তা আমি জানি না। ভাবিও
না। অপরের সম্পদ দেখে, চেহারা-যৌবন দেখে, চাকুরি-ক্ষমতা দেখে আফসোস
করা ঠিক নয়। কেউ কেমন আছে, সুখে আছে নাকি দুঃখে ভেতর মরে গেছে- তা
বাহিরের চাকচিক্য দেখে অনুমান করা যায় বটে তবে সেটা সবসময় সঠিক নাও
হতে পারে। হাসির আড়ালেও যে বেদনার দীর্ঘশ্বাস বইতে পারে তা দুঃখী জানে! সুখ
যে আসলে কীসে- তা মহোত্তম সত্তা জানে।
সবর করুন- বর্ষপঞ্জির পৃষ্ঠার পালাবদলে আপনার দিন ফিরবে। অধৈর্য হলে,
ভাগ্যকে গালাগাল দিলে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হতে পারে। আফসোস সম্ভাবনার
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে। কারো মোটা অঙ্কের বেতন, দামী গাড়িতে আগমন কিংবা
চাপরাশিতে অভিবাদন- আপনি এটাকে সফলতা ভাবছেন? সফলতার মাপকাঠি যদি
সম্পদ দ্বারা নির্ধারণ করেন তবে তর্কে জড়াবো না। কিন্তু সাফল্য যদি সুখ হয়
তবে আপনি অভিনয় দেখে ধোঁকা খাচ্ছেন। পরাধীনতা বরণকারীর কাছে
স্বাধীনতার স্বাদের কথা জানতে যাবেন না। জীবন উপভোগের সৌন্দর্যের কথা
যাযাবরের কাছ থেকে শুনুন। সুখ-সুধা যে পেয়েছে সেই কেবল ঠিক ঠিকানা জানে।
প্রিয় মানুষটি প্রিয়জন হয়নি বলে যে-জন জীবনের সাথে মিশে গেছে তার ওপর
অবিচার করবেন না। যাকে অন্ধভাবে ভালোবাসতেন তার সাথে পরিণয়ন হলে
আপনার জীবনে নরক নেমে আসতে পারতো! আপনি যে চাকুরি পাননি বলে হতাশায়
নিমজ্জিত সেই কাজটি পেলে সম্মান হারাতে পারতেন। এমনকি জীবন চলে যেতেও
পারতো! আপনার জন্য যেটা মঙ্গল মনে করা হয়েছে এবং আপনার চেষ্টায়
যতখানি যোগ্য হয়েছেন- সেটা আপনাকে দেওয়া হয়েছে। কারো সাথে তুলনা করে
নিজের সুখ খোওয়াবেন না। আপনি আপনিই! কারো ভাগ্যের সাথে আপনার ভাগ্য
তুল্য নয়। নিজের আয়নায় নিজেকে দেখুন এবং পরিণতির জন্য কৃতজ্ঞ থাকুক।
পৃথিবীর অনেক মানুষের চেয়ে আপনি ঢের ভালো আছেন।
মানুষ ঘটা করে সহজ জীবনকে জটিল করে রাখে! লোভে সে দিন হারায়। ব্যস্ততায়
নষ্ট করে উদযাপনের সুখ। সে প্রতিনিয়ত তুলনা করে মন খারাপ করে! কারো
ভাগ্যের সাথে অন্য কারো ভাগ্য তুলনা করে তো কিছুই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
লোভ-মোহ ছাড়তে না পারলে, অন্যায়-অপরাধ থেকে দূরে না থাকলে ভাগ্য বদলাবে
না। দুনিয়াতেই সব তেষ্টা মিটিয়ে নিলে জান্নাত-নরকের আবেদন থাকে না! কিছু
অপ্রাপ্তির প্রাপ্তি ওপারেও আছে। কিছু ভোগ, কিছু উপভোগ এবং পুরস্কার-
শাস্তি পরকালেও পাবেন। দুনিয়ায় সাধারণ থাকলে পরকালে অসাধারণ হওয়ার
সুযোগ থাকে! হেলায় যাতে বেলা হেলে না পড়ে! নিজেকে গুছিয়ে রাখুন এবং সুখী
ভাবুন।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com