সম্প্রতি বিএনপির সমাবেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে বিএনপি নেতা মেজর হাফিজের দেয়া বক্তব্যকে মিথ্যাচার উল্লেখ করে, এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম অডিটোরিয়ামে কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে “আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তির সোপান” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ইতিহাসের সত্যকে বিকৃত করা বা মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র বারবার এই কুতর্ক সামনে আনে কারণ তাদের পায়ের তলায় মাটি নাই।
বক্তারা মেজর হাফিজের বক্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, মিথ্যাচার এবং দেশের প্রচলিত আইনে ফৌজধারী অপরাধ বলেও উল্লেখ করেছেন।
সভায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখন এটি তাৎক্ষণিকভাবে সারাবিশ্বে প্রচারিত হয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের সেনাশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় যে ভাষণ দেন সেই ভাষণে তিনি সরাসরি স্বীকার করে নেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাকিস্তানের পূর্ব অংশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করে ফেলেছে। এবং এই কথাগুলো ইতিহাসের সর্বত্র এমন সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে যে এগুলো নিয়ে কুতর্ক করা যায় কিন্তু কোন ধরণের বিতর্ক করার সুযোগ নাই। এগুলো ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং এই সত্য নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।“
তিনি আরও বলেন “বঙ্গবন্ধুর কথা বলতে গিয়ে ইয়াহিয়া খান তাঁর সেই ভাষণে বলেছিলো, হি (শেখ মুজিব) হ্যাড এটাক্ট দ্যা সলিডারিটি অ্যান্ড ইন্টিগ্রিটি অব দিস কান্ট্রি। দিস ক্রাইম উইল নট গো আনপানিশড। এ উক্তি থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাকিস্তানের সংহতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলো। ইয়াহিয়া তাঁর নিজের ভাষণেই সেটি স্বীকার করে নিয়েছেন। ইয়াহিয়া সেদিনের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেছেন তের বার এবং বঙ্গবন্ধুকে বুঝাতে যেয়ে সে, তিনি, তাঁর ইত্যাদি সর্বনাম ব্যবহার করেছেন মোট একুশ বার। ঐ ভাষণে আর কারও কোন নাম ছিলো না।“
আরেফিন সিদ্দিক আরও বলেন “সেদিনের সেই ভাষণে ইয়াহিয়া আরও বলেন, দ্যা ম্যান (শেখ মুজিব) অ্যান্ড হিস পার্টি আর দ্যা এনিমি অব পাকিস্তান এন্ড দে ওয়ান্ট দ্যা ইস্ট পাকিস্তান কমপ্লিটলি ব্রেক ফ্রম দ্যা কান্ট্রি। পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক করার যে প্রচেষ্টা বঙ্গবন্ধু করেছিলেন, সে কারণেই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের প্রধান শত্রু বলে চিহ্নিত করেছিলেন ইয়াহিয়া।”
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পরিষদের বক্তারা বলেন, ইতিহাসের সত্যকে বিকৃত করা বা মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বারবার এই কুতর্ক সামনে আনে কারণ তাদের পায়ের তলায় মাটি নাই। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক নুরুর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, হারুন-অর-রশিদ এফসিএ এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সালাম প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড জিয়া রহমানের অকাল মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।