সর্বত্রই ভয়ানকভাবে অসুস্থ ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। যা সমাজ-সংসারকে বিষিয়েছাড়বে! ঈদের বাজেট পাঁচ লাখ টাকা। ২৫ টি পাকিস্তানিথ্রি-পিস এবং একেকটি নয় হাজার টাকা দামের ১৫ টি পাঞ্জাবি ইতোমধ্যেই কেনা হয়েছে! এখনো অনেক কিছুই কেনাকাটা বাকি! ফ্রান্সে থাকা স্বামীর পাঠানো টাকায় ৩৬ হাজার টাকায় ৪ জোড়া জুতা! ঈদের বাজেট ২ লাখ টাকা! স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের জন্য মাসিক খরচ ৫০k. এই খবরগুলো এখন বেশিবেশি জানছি। কেন? এবার ভারতে ঈদ শপিংয়ে যাওয়া যায়নি! এইসবের বর্ণনায় না গিয়ে এবার আসল কথায় আসি! আপনার বাজেট কত সেটা নিজের ভেতরেই রাখুন। সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করুণ। প্রয়োজনে ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হন। তবুও সমাজকে বিপদগ্রস্ত করার নৈতিক অধিকার কারো নাই।
যাদের সামর্থ্য আছে তারা ঈদের বাজেট একশ কোটি নির্ধারণ করুক, ১০৭ কোটি খরচ করুক- তাতে কার কী আসে যায়! সমস্যা তো অন্যত্র! হাজী সাহেবের অহংকার নাই, এই অহংকারে তার পা মাটিতে পরে না অবস্থা! ঈদের জন্য ১০-২০ হাজার টাকা বাড়তি বাজেট করতে পারে এমন পরিবারের সংখ্যা আমাদের আশেপাশে কতটি? প্রশ্ন তবে থেকেই যায়! সবাই ফকির বলে আমি আমার সক্ষমতা দেখাবো না? নাহ! মতিউর পুত্রের ছাগল কাণ্ডের কথা মনে আছে? মানহীন মিডিয়াগুলো এইগুলো দেখিয়ে নিজেরা ভিউ ব্যবসা করছে বটে কিন্তু সমাজের যে কী পরিমাণ ক্ষতি করছে তা ওরা জানে? জানলেও কোনোদিন নিয়ম মেনে বস্তুনিষ্ঠ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক সাংবাদিকতা করবে না। ইউটিউবাররা তো আরও বেপরোয়া!
সমাজে ভালোর চেয়ে মন্দ চলে বেশি। মন্দ দৃষ্টান্ত দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার হার বেশি! অমুক-তমুকের বউ ঈদে পঞ্চাশ হাজার টাকার উপহার পায়, খালেক-মালেকের সন্তান ঈদে পঁচাশি হাজার টাকার পাঞ্জাবি জুতা পায় অথচ আমার/আমাদের ভাগ্য কত খারাপ! স্বামীর সামর্থ্য, বাবার সক্ষমতা এবং পরিবারের অবস্থা তখন মাথায় থাকে না। বউ দামি শাড়ি না পাওয়ার চরম অভিমানে স্বামীর সাথে রাগ করে বাঁশের ডগায় নাচে! জীবনকে বাঁশ দেওয়া থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা শাড়ি নিয়ে নার্গিসকে জমিনে নামাতে আসে! এসব দেখে আপনার রাগ হয় না?
বউয়ের কপালে দুই জোড়া জুতা কম জুটেছে বলে সে স্বামীর ঘর করার কপালে ঝাড়ুর ভারী দেয়! সন্তান এই ঈদেও বাইক ও মোবাইল না পেয়ে বাবার জন্ম দেওয়ার মুরোদ নিয়ে প্রশ্ন তোলে! জরিনা তো কিরণমালাড্রেস না পেয়ে আত্মহত্যা করে। ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন বাহানায় মা-বাবাকে জিম্মি করার সংখ্যাটা এখানে কম নয়! সংসারে মোটামুটি সার্কাস শুরু হয়। সামর্থ্যের বাইরে গিয়েও ঈদে এটা-ওটা লাগবেই এই বোধ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারা প্রবেশ করিয়েছে? ওরা! ক্যামেরার সামনে ঈদের বাজেট পাঁচ-দশলাখ বলা বিকৃতমস্তিষ্কের মালিকেরা! সরকারি দপ্তরে কাজ করা ন্যায়পরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাভিশ্বাসের শেষ নাই! বৈধ টাকায় পরিবারের সবার জন্য পঁচিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার উপহার কেনার সামর্থ্য কজনের আছে! তবে যারা অসৎ তাদের দিনকাল ভালোই চলছে!
বেসরকারি সেক্টরের ছোট চাকরিজীবীদের কথা ভাবুন? ঈদের সময় ভাবুন কৃষক-শ্রমিকদের পরিবারের পরিস্থিতি! যাদের সেমাই-চিনি কেনার টাকাও জুটে না তাদের কথা মাথায় রেখে আপনি দামিদামি জুতা, শাড়ি কিংবা গহনাদি কেনার কথা মিডিয়ায় বলছেন? জুতা যা কিনেছেন তার সাথে আরেক জোড়া বাড়তি জুতা কিনলে বড্ড ভালো হয়! গরিবকে দান করার জন্য? ওরে না। বোধকেও জুতা পরিধান করাতে হবে। ধুলাবালি থেকে রক্ষার জন্য পায়ে যে পাদুকা পরিধান করতে হয় সে-রকম একজোড়া জুতা বিবেকে কিংবা চোখে জড়ালে বোধবুদ্ধি সুগঠিত হতে পারে।
মুখের সামনে বুম এবং চেহারার সামনে ক্যামেরা পেলেই সব কথা বলা যায় না, বলা উচিত নয়। আপনার ঈদ বাজেট তিন লাখ টাকা- এটা দোষের কিছু নয় বরং গৌরব করার মত ব্যাপার। নিজেকে ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত ভাবতে পারেন। তবে আপনার কথায় সমাজে কী প্রভাব পড়ে, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা কেমন এবং আপনার উক্তি দ্বারা কারো বিপথগামী হওয়ার শঙ্কা থাকে কিনা- সেই বোধটুকুরবিবেচনাবোধ কথার মাঝে থাকা উচিত। সবকিছু জাহির করা যায় না, জাহির করা উচিত না। এই সমাজে কেবল ধনীরা বাস করে না, গরিবরাও আছে। কিছু ব্যাপার গোপন করুণ। আপনার চাকচিক্যের দ্বারা কেউ যদি কষ্ট পায় তবে আপনি তার কষ্টের জন্য অনেকখানি দায়ী। এ জন্য আইনে হয়ত আপনার শাস্তি নাই তবে বিচ্যুতির জন্য ঘৃণা পাবেন। বাড়াবাড়ি কিছুই ভালো নয়।
রাজুআহমেদ, প্রাবন্ধিক। raju69alive@gmail.com