স্বাধীনতা কি কেবল একটি শব্দ?
নাকি এক মহাসমুদ্র, যার ঢেউয়ে লেগে থাকে যুগযুগান্তরের রক্তের দাগ?
স্বাধীনতা কি কেবল একটি পতাকা?
নাকি এক মহাগান, যার প্রতিটি নোটে বাজে বীরের আত্মত্যাগের সুর?
এ এক বিস্তীর্ণ প্রান্তর, যেখানে বাতাসে এখনো ভাসে নির্যাতিতের দীর্ঘশ্বাস,
এ এক মহীরুহ, যার শেকড়ে মিশে আছে অগণিত শহীদের অশ্রুজল।
এ এক লাল নদী, যার প্রতিটি তরঙ্গ বয়ে নিয়ে চলে বুলেটের বিদ্ধ শরীর,
এ এক অবিনশ্বর অগ্নিশিখা, যা শীতল হয় না, নিভে যায় না,
বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্বলে ওঠে নতুন প্রত্যয়ের আলো হয়ে।
স্বাধীনতা মানে মাতৃভূমির আকাশে স্বপ্নের মেঘের আনাগোনা,
স্বাধীনতা মানে শিশুর উজ্জ্বল চোখে এক নতুন ভোরের প্রতিচ্ছবি।
এ এক রাজপথ, যেখানে ইতিহাসের পদচিহ্ন খোদাই করা,
এ এক শ্মশান, যেখানে বীরেরা শুয়ে আছে চিরনিদ্রায়,
তাদের নিঃশ্বাস এখনো বাতাসে মিশে দোল খায়,
তাদের কণ্ঠস্বর এখনো বজ্রের মতো প্রতিধ্বনিত হয় আমাদের অন্তরে।
স্বাধীনতা মানে এক মাতার আর্তনাদ,
যে তার সন্তানের রক্তমাখা শরীর বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,
“তোর রক্ত বৃথা যাবে না!”
স্বাধীনতা মানে সেই পিতার নীরব অশ্রু,
যিনি ছেলের কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,
“তুমি বেঁচে থাকবে আমার প্রতিটি শ্বাসে!”
স্বাধীনতা মানে এক বোনের অপেক্ষা,
যে ভাইয়ের ফিরবে বলে দরজায় প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিল,
স্বাধীনতা মানে এক স্ত্রীর কান্না,
যে স্বামীকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল, ফিরে আসেনি আর কোনোদিন।
স্বাধীনতা মানে রক্তে রাঙা পদ্মফুল,
যা ফোটে যুদ্ধক্ষেত্রের বধ্যভূমিতে,
স্বাধীনতা মানে বুলেটের আঘাতে বিদীর্ণ শরীর,
তবুও শেষ নিশ্বাসে উচ্চারিত “জয় বাংলা!”
স্বাধীনতা মানে সন্ধ্যা নামার পরেও বুকের মধ্যে জ্বলে থাকা এক অগ্নিশিখা,
যা অন্ধকারকে গ্রাস করে আলোর পথ দেখায়।
স্বাধীনতা মানে নদীর মতো বয়ে চলা,
স্বাধীনতা মানে পাহাড়ের মতো মাথা তুলে দাঁড়ানো।
এ এক এমন শক্তি, যা কষ্টকে ভালোবাসায় রূপান্তর করে,
এ এক এমন শপথ, যা মৃত্যুর চেয়েও মহিমান্বিত হয়ে ওঠে।
স্বাধীনতা মানে কেবল শত্রুর শেকল ভাঙা নয়,
স্বাধীনতা মানে নিজের মনের ভেতরকার ভয় জয় করা।
স্বাধীনতা মানে কেবল যুদ্ধ নয়,
স্বাধীনতা মানে সে যুদ্ধের ইতিহাস ধরে রাখা,
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেওয়া এক অমর বার্তা।
এই স্বাধীনতা সহজে আসেনি,
একে পেতে রক্ত দিতে হয়েছে,
একে পেতে আগুনের নদী পার হতে হয়েছে,
একে পেতে স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছে,
তবু মাথা নত করা হয়নি,
তবু স্বপ্ন দেখা থামেনি,
তবু ভালোবাসার গান গাওয়া থামেনি।
স্বাধীনতা মানে ঐ পাখিটির ডানা মেলে আকাশ ছোঁয়া,
যে এতদিন খাঁচায় বন্দী ছিল।
স্বাধীনতা মানে মাটির ঘ্রাণ বুক ভরে টেনে নেওয়া,
স্বাধীনতা মানে এক শিশুর হাসি,
স্বাধীনতা মানে এক কবির কলম,
স্বাধীনতা মানে এক চাষির কাস্তে,
স্বাধীনতা মানে এক নারীর স্বপ্ন,
স্বাধীনতা মানে এক দেশের আত্মা!
স্বাধীনতা অমর, স্বাধীনতা চিরন্তন,
এ এক এমন সুর, যা কখনোই নিঃশব্দ হয় না,
এ এক এমন আলো, যা কখনোই নিভে যায় না।
স্বাধীনতা মানে জীবন,
স্বাধীনতা মানে মৃত্যু—
তবু এক আশার নাম, এক ভালোবাসার নাম,
যা প্রতিটি হৃদয়ে চিরকাল জ্বলবে,
চিরকাল বেঁচে থাকবে!
দুপচাঁচিয়া,বগুড়া।